Never lose hope Bangla short story-Inspirational story

 

Inspirational story
Inspirational story/short story
story online/short story in bangla

হাঙ্গেরিতে যে লোকটি একজন ন্যাশনাল হিরো,সেখানকার প্রত্যেকটা মানুষের অনুপ্রেরণা এই মানুষটি ।তার জীবনের এক অবিশ্বাস্য গল্প শুনে হাজার হাজার মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে শিখেছে জীবনে। তারা অন্তত এটা বুঝতে শিখেছে জীবনকে সীমাবদ্ধতার দেয়ালে আটকে রাখার জন্য নয় বরং জীবনের প্রকৃত অর্থ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা আর  সীমাবদ্ধতার দেয়াল ভেঙে চুরমার করে দেওয়া। 

ক্যারলি তাকাস নামে একজন হাঙ্গেরিয়ান লোক ছিলেন,তিনি ছিলেন  হাঙ্গরির সবচেয়ে ভালো শ্যুটার। সবকয়টি ন্যাশনাল প্রতিযোগিতায়ও জেতা হয়ে গিয়েছিলো তার। তার  ট্যালেন্ট এবং পারফরম্যান্স দেখে সবাই তখন ধরেই নিয়েছিল যে ১৯৪০ সালের ন্যাশনাল অলম্পিকের   গোল্ড টা উঠবে ক্যারোলির হাতেই।ক্যারোলিও সারা বছর ধরে সেভাবেই প্রস্তুতি নেয়।তখন একটাই স্বপ্ন তার এই হাতকে  পৃথিবীর সেরা শ্যুটারের হাত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা।

সবকিছু চলছিলো ঠিকই, তার সামনে এখনো দুইটা বছর। সে জানে এই দু বছরে নিজেকে আরো ধারালো  ও অ-প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তৈরি করতে পারবে সে। 

কোন ১৯৩৯ সালে একটি আর্মি ক্যাম্প চলছিল,একজন আর্মি হিসেবে ক্যরোলিও সে ক্যাম্পে ছিল। হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় পড়ে যায় সে ।যে হাতকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শ্যুটারের  হাত বানানোর স্বপ্ন দেখেছিল সে,সে হাতই  উড়ে যায় গ্রেনেড বিস্ফোরণে। তার এতো বছরের  সামর্থ্য, স্বপ্ন শ্রম সব কিছু একমুহূর্তে যেন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

 তখন তার সামনে মাত্র দুটো পথই খোলা ছিল -সে সারাজীবন একজন হেরে যাওয়া মানুষ হয়ে নিজেকে লুকিয়ে রেখে বেঁচে থাকবে আর না হলে সে ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্ন কে পুনরুজ্জীবিত করবে ।পৃথিবীতে দেখাবে একটি অসম্ভব কিভাবে সম্ভব হয়ে উঠতে পারে। তার যা আছে সেটা নিয়েই নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন আর যা নেই তার শেষ হয়ে গেছে সেই অনুতাপ আজীবনের জন্য চাপা  দিলেন।

 এতকিছুর পরও এখনও তিনি কিন্তু একজন সেরা শ্যুটার হতে চান। তার কাছে স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার মত যা ছিল তা হচ্ছে তার অন্য একটি হাত ।অর্থাৎ বাম  হাতটি, যেটি   এমন হাত যা দিয়ে সে লিখতেও পারতোনা।

তার ক্ষতিগ্রস্ত হাতের চিকিৎসা চলে এক মাস আর দীর্ঘ একমাস পরে সে তার বাম হাত নিয়ে ট্রেনিং শুরু করে দেয়। এক বছর পর ১৯৩৯ সালে পুনরায় ফিরে আসে প্রতিযোগিতায়। হাঙ্গেরিতে ন্যাশনাল শ্যুটিং শুরু হয়,সেখানে দেশসেরা শ্যুটাররা অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতায় অন্যান্য শ্যুটাররা তাকে অভিনন্দন জানাই। তারা  অবস্থায় আমাদের অনুপ্রাণিত করতে এসেছ সেটা পূর্ণ বাক্যে মজাক্যারোলিকে বাহবা দিলো।এই হলো একজন আসল খেলোয়াড়,তুমি এই অবস্থায়ও  যে আমাদের অনুপ্রাণিত করতে এসেছো সেটা অভিনব,অসংখ্য ধন্যবাদ!

মজার ব্যাপার হলো তারা কেউ জানতো না যে ক্যারোলি গত এক বছর ধরে অন্যহাতে শুটিং চর্চা করছে। তাদের কথার প্রত্যুত্তরে সে বলেছিল "আমি এখানে তোমাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য আসিনি, আমি তোমাদের প্রতিযোগী সুতরাং তৈরি হয়ে যাও।" 

প্রতিযোগিতা শুরু হল ,প্রতিযোগিতায় সবাই নিজের সেরাটা দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালালো ।আর ক্যারোলি নতুন এবং একমাত্র হাত দিয়ে প্রতিযোগিতা করল এবং একহাতে দৃঢ় মনোবলের মানুষটি  বিজয়ী হলো ।কিন্তু এখানে এসে থেমে থাকে নি কারণ তার ইচ্ছা  তার হাত হবে   বিশ্বসেরা শ্যুটের হাত ।

 এরপর ১৯৪০ সালের অলিম্পিকের জন্য মনোযোগী হয় কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪০সালের অলিম্পিক বাতিল হয়ে যায় ।স্বাভাবিকভাবেই ১৯৪৪ সালের অলিম্পিকের দিকে চেয়ে থাকতে হয়  তাকে কিন্তু সেটিও যুদ্ধের কারণে বাতিল ঘোষণা হয় ।

তার সামনে এবার অপেক্ষার ১৮৪৮ সালের অলিম্পিকের দিকে ।যদিও ততদিনে ২৮ বছরের তরুণ  এখন আর ৩৮ বছর বয়সী হয়ে গেছে ।তরুণ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাটা কঠিন  হয়ে উঠেছিল তার জন্য, কিন্তু তার দৃড়তার  কাছে কঠিন বলে আর অসম্ভব বলে কিছু জায়গা ছিল না। অলিম্পিককে ঘিরে সারা বিশ্ব থেকে আসা বাঘা বাঘা সব শ্যুটারদের  সাথে নিজেকে একই যুদ্ধের ময়দানে নামালো  ক্যারোলি।আর এবারও একহাতের হার না মানা মনোভাবের  মানুষটিকে জিতে  যায় ।

তার যাত্রা তবুও থামেনি।১৯৫২ সালের অলিম্পিকে আবারো  অংশগ্রহণ করেন এক হাতের শ্যুটার  ক্যারোলি। এবারও  অলিম্পিকের গোল্ড মেডেল তার হাতেই উঠলো । চার বছর পর দ্বিতীয়বারের গোল্ড  জেতা তখনকার অলিম্পিকের  সর্বকালের ইতিহাস পাল্টে দিয়েছিল ।

শুটিংয়ে এর আগে পর্যন্ত পরপর দুইবার কেউই  গোল্ড মেডেল জেতেনি ।ব্যর্থতার হাজারটা কারণ আর  অজুহাত থাকে কিন্তু সফলতার  একটাই কারণ সে হলো  ইচ্ছাশক্তি। ইচ্ছাশক্তি আপনাকে এমন কিছু করাতে পারে যা আপাতঃদৃষ্টিতে  অনেকের চোখে অসম্ভব । ইচ্ছাশক্তি এমন একটি চেতনা যার মধ্যে লুকিয়ে যায় দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা এবং  পরিশ্রম করার মানসিকতা। যারা বলেন আমার ইচ্ছা শক্তি আছে কিন্তু করতে পারছিনা কারণ এই কারন সেই । কিন্তু আসল কারন আপনার ইচ্ছাশক্তি এখনো ততটা শক্তি অর্জন করতে সক্ষম হয়নি যেটা দিয়ে কাজটি করা সম্ভব ।




Post a Comment

0 Comments