4 easy ways how to stop wasting time in bangla

how to stop wasting time

সময় নষ্ট করা বন্ধ করার  টি সহজ উপায় 

4 easy ways how to stop wasting time


বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ও নিত্য নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন যেমন দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থাও আরো সহজ হয়ে গেছে।আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব কতটুকু তা আমাদের স্মার্টফোন ও আইফোনের নির্ভরতা দেখে সহজেই অনুমান করা যায়।গবেষণায় দেখা গেছে সারা বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৭০% মানুষই ফেসবুক,টুইটার,ইনস্টাগ্রাম,ইউটিউব সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকেন।যাদের মধ্যে প্রায় ৯০% তরুণই  বাস্তব জগত থেকে ভার্চুয়াল জগতের প্রতি বেশি আসক্ত।


সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অনেকেই তাদের বেশিরভাগ চিন্তা-ভাবনা ও সময় এর পেছনে ব্যয় করে থাকেন।আবার অনেকে কাজের ফাঁকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকে মাল্টিটাস্কিংও  বলে মনে করে থাকেন।কিন্তু বাস্তবে  মাল্টিটাস্কিং ও আসক্তি যে ভিন্ন দুটি জিনিস তা তারা স্বীকার করতে চান না।ফলে বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি আমাদের জন্য একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।



ভেবে দেখুন তো প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কিংবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনি প্রথমে কোন কাজটি করে থাকেন! আপনি কি দিনের বেশিরভাগ সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার পেছনে ব্যয় করেন? নোটিফিকেশনের টিং টিং শব্দ কি আপনাকে আনন্দ দেয় কিংবা ভার্চুয়াল জগতটাই কি আপনার কাছে বেশি রোমাঞ্চকর মনে হয়? আপনার উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তবে আপনিও অবশ্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছেন। আর জীবনে সফল হতে হলে প্রথমেই আপনাকে এই আসক্তি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আপনি যদি সত্যিই এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্যই।


সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি আমাদের জীবনে কেমন প্রভাব ফেলছে এবং কিভাবে এই আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব তা নিয়ে আমাদের আজকের পোস্ট। আশা করি এই টিপসগুলো মেনে চললে আপনিও এই আসক্তি থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবেন।


প্রথমেই জেনে নেই সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার কিভাবে আপনার কর্মদক্ষতাকে কমিয়ে আপনাকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।



স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারের প্রতিযোগিতা:গবেষণায় দেখা গেছে অধিকাংশ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের কারণে আমাদের একাকীত্ব,উদ্বেগ এবং বিষন্নতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে ।বিশেষ করে যারা আবেগপ্রবণ এবং হতাশাগ্রস্ত কিংবা নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিকভাবে চাপে থাকেন তাদের মধ্যেই এই ধরনের আসক্তি বেশি দেখা যায়।তারা মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের ভালো সময় ও স্মৃতিগুলো তুলে ধরতে চান। আর এজন্যই তারা নিজেকে সুখী প্রমাণ করতে অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতা করা শুরু করে দেন।ফলে এক অবান্তর যাওয়া তাদের মনে বাসা বাঁধতে শুরু করে যা প্রকৃতপক্ষে তাদেরকে আরো বেশি হতাশাগ্রস্ত করে তোলে।



মস্তিষ্কের গঠন বিকৃতি:আমাদের মস্তিষ্কে প্রতিনিয়ত ডোপামিন নামক এক কেমিক্যাল মিশ্রিত হয় অর্থাৎ প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু ঘটলেই মস্তিষ্কের ডোপামিনের প্রবাহ বেড়ে যায়।আর ভালো লাগার অনুভুতিকে বাড়াতে ডোপামিনের যে অতিরিক্ত নিঃসরণ হয় তার নামই আসক্তি।ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি এই আসক্তি আমাদের মস্তিষ্ককে একঘেঁয়ে  করে তোলে।বারবার নোটিফিকেশন চেক করার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ডোপামিন নিঃসৃত হয়।যা মস্তিষ্কের গঠন একেবারে পাল্টে দেয় এবং মানুষের কর্মদক্ষতাও কমিয়ে দেয়।




স্পট লাইট ইফেক্ট:যখন আপনি কোন কাজ করতে দ্বিধাবোধ করেন তখন আপনি কি করেন?আপনি কি সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজটি করে ফেলেন নাকি বিভ্রান্ত হয়ে সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্য কোন কিছুতে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন। গবেষণায় দেখা গেছে মানুষ যখন কোন কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে তখন তার মস্তিষ্কে কাজটি নিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভয় সৃষ্টি হয়।তাই ৫ সেকেন্ড বা তার বেশি সময় বিভ্রান্ত থাকলে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার সামনে এসে পড়েন এবং ঘন্টার পর ঘন্টা এর পেছনে ব্যয় করেন।কিন্তু এভাবে তারা প্রতিদিন কত মূল্যবান সময় নষ্ট করে তারা নিজেরাও বুঝতে পারে না।



বাস্তব জীবনে অবাস্তব প্রত্যাশা:সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা মানুষের জীবনের নিখুঁত অংশটুকুই  শুধু দেখতে পাই।সাধারণত মানুষ তার নিজের দুর্বলতা বা  তিক্ত অভিজ্ঞতা গুলোই খুব কম প্রকাশ করে থাকে।তাই তাদের ব্যর্থতার গল্পগুলো বেশিরভাগ সময় আমাদের অগোচরেই থেকে যায়।কিন্তু যখন আপনি এমন নির্ভুল গল্পগুলোর সাথে নিজের তুলনা করবেন তখন আপনার মনে প্রচুর হতাশা,শূন্যতা, উদ্বেগ ও বিষন্নতার সৃষ্টি হবে।একসময় আপনি নিজেও তাদের লাইফস্টাইল অনুকরণ করার চেষ্টা করবেন।এভাবেই অবাস্তব চাহিদা আপনার বাস্তব জীবনে প্রবেশ করবে।


সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি আমাদের জীবনে কতটা খারাপ প্রভাব ফেলছে তা আমরা উপলব্ধি করতে পারলেও এর প্রতিকার খোঁজার চেষ্টা করি না। অথচ সহজ কিছু টিপস মেনে চললে আপনিও আপনার এই আসক্তি থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন।আশা করি এই সহজ ৪টি  টিপস আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং এর সীমিত ব্যবহার আপনার দৈনন্দিন জীবনের কাজ গুলোকে সঠিক সময়ে সহজভাবে করতে সাহায্য করবে।



নাম্বার ওয়ান 

দিনের শুরুতে এবং রাতে ঘুমানোর আগে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার পরিহার করুন।আপনি  যখন ঘুম থেকে উঠেন তখন আপনার মস্তিষ্ক অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। ফলে আপনি যেকোন কাজ দ্রুত করে ফেলতে পারবেন ।কিন্তু এই সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার আপনার মূল্যবান সময় এবং কাজ করার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয় ।অপরদিকে অনেকে আবার কর্মব্যস্ত দিনের শেষে তাদের ক্লান্তি দূর করতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে এর মাধ্যমে তাদের কোনো ক্লান্তি দূর হয় না বরং তারা ভেতরে এক ধরনের শূন্যতা অনুভব করেন।পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে তাদের দৈনন্দিন কাজেও ব্যাঘাত ঘটে। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমানোর আগে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার পুরোপুরি এড়িয়ে চলুন।কারণ এই সময় আপনার মস্তিষ্ক অধিক সক্রিয় থাকে ।এক্ষেত্রে আপনার মূল্যবান সময় গুলো বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করুন।



নাম্বার টু 

নির্দিষ্ট সময় বেছে নিন।যেকোনো আসক্তি থেকে বের হয়ে আসার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সেটির ব্যবহার কমিয়ে দেওয়া অথবা একেবারে বাদ দেওয়া।তাই  সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি কতটুকু সময় ব্যয় করবেন প্রথমে তা ঠিক করে নিন।কেবল আপনার প্রয়োজনীয় কাজগুলো শেষ হলেই এটি ব্যবহার করুন।যেমন- আপনি যদি একজন শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তাহলে প্রতিদিনের পড়াশোনা শেষ করে এটি ব্যবহার করুন।অথবা আপনি একজন অনলাইন ব্যবসায়ী হয়ে থাকলে যখন তখন অনলাইনের ব্যবহার না করে সেখানে একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নিন।পাশাপাশি সপ্তাহে একদিন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার বন্ধ রাখুন।পরবর্তীতে আপনার সুবিধামতো তা বাড়িয়ে নিতে পারেন।এই পদ্ধতিটি শুধু আপনার  সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি কমিয়ে আনবে না বরং আপনার প্রতিদিনের কাজও ঠিক সময়ে করতে সাহায্য করবে।



নাম্বার থ্রি 

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন মানুষদের অনুসরণ করুন।সোশ্যাল মিডিয়া আপনার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলবে তার পুরোটাই নির্ভর করে আপনি সেটাকে কিভাবে ব্যবহার করছেন তার উপর।এখন আপনি যদি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন কোন ব্যক্তিকে অনুসরণ করেন বা তাদের অবাস্তব লাইফ স্টাইল থেকে প্রভাবিত হন তাহলে তা আপনার জীবনে নেগেটিভ প্রভাবই ফেলবে।কিন্তু আপনি যদি পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গির কাউকে অনুসরণ করেন তাহলে তার চিন্তা-ভাবনা আপনাকে সফল হতে অনুপ্রাণিত করবে এবং আপনার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উৎসাহিত করবে।তাই সোশ্যাল মিডিয়া অনুসরণ করার জন্য এমন কাউকে বেছে নিন যে আপনাকে জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা রাখতে সাহায্য করবে।



নাম্বার ফোর 

ওয়েবসাইট ব্লক করা। বর্তমানে এমন অনেক এপ্লিকেশন আছে যেগুলো দিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্লক করা যায় ।এক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি কমাতে আপনিও এই পদ্ধতিটি কাজে লাগাতে পারেন।প্রথমে আপনি কোন অ্যাপস-এর প্রতি আসক্ত তা চিহ্নিত করুন।ফেসবুক,ইনস্টাগ্রাম,হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা অন্য যে কোন অ্যাপসে আসক্ত হয়ে থাকুন না কেন সেগুলো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্লক করে দিন।তাহলে আপনি চাইলেও নির্দিষ্ট সময়ের আগে এতে প্রবেশ করতে পারবেন না।এতে আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি যেমন অনেকটাই কমে যাবে তেমনি আপনি আপনার মূল্যবান সময় অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।প্রকৃতপক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্বশীল ব্যবহারের মাধ্যমে এর নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনা সম্ভব।



আশাকরি আমাদের আজকের পোস্টটি আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি কমিয়ে এটিকে  নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করবে। আপনি সোশ্যাল মিডিয়াকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে উপরের পদ্ধতিগুলোর মধ্যে থেকে কোন পদ্ধতিটি অনুসরণ করবেন তা অবশ্যই আমাদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ভাল থাকুন,সুস্থ থাকুন।অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইল।

Post a Comment

0 Comments