Thomas Alva Edison Biography In Bangla||Thomas Alva Edison story

 

thomas alva edison bangla
Thomas Alva Edison Bangla

Thomas Alva Edison Biography In Bangla||Thomas Alva Edison story

MOTIVATIONAL STORY

আজ এমন একজন বিজ্ঞানীর কথা বলবো যিনি পৃথিবীর দিশা বদলে দিয়েছিলেন।তিনি হলেন বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন ।

আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা কি জানেন কোনকিছুতে খুব সহজেই পরাজয় স্বীকার করে নেওয়া।তিনি বলতেন"সফলতা পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো আরও একবার চেষ্টা করা,আর ততক্ষন চেষ্টা করা যতক্ষণ না আপনি সফল হয়ে যান ।"

আজ এই পোস্টে  তার সম্পর্কে নানান আকর্ষণীয় তথ্য আপনাদের কাছে  তুলে ধরবো।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অতি প্রয়োজনীয় বিস্ময়কর কি এমন জিনিস  নেই যা তিনি আবিষ্কার করেন নি?বৈদ্যুতিক বাতি,টেলিফোন,ভিডিও ক্যামেরা,সাউন্ড রেকর্ডিং ও মাইক্রোফোন সহ আরও কত কিযে আবিষ্কার করেছেন এককথায় তা বলা অসম্ভব।


১১ই  ফেব্রুয়ারি,১৮৪৭ খ্রীষ্টাব্দে আমেরিকার একটি মধ্যবৃত্ত পরিবারে জন্ম হয় স্যার টমাস আলভা এডিসনের।তার পিতার নাম হলো স্যামুয়েল এডিসন এবং মাতার নাম ন্যান্সি ম্যাথিউস এলিয়ট (Nancy Matthews Elliott )। তিনি ছিলেন তার পিতামাতার সর্বশেষ সন্তান অর্থাৎ সব ভাইবোনদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবথেকে ছোট ।


ছোটবেলা থেকেই টমাস  আলভা এডিসন জ্বরে এবং কানের সমস্যায় ভুগতেন।ছোটবেলায় তিনি কিছুদিন পর পর জ্বরে ভুগতেন এবং এর সাথে কানের সমস্যাও ছিল যার জন্য তিনি ঠিকঠাক শুনতে পেতেন না ।এভাবেই টমাস এডিসন বড় হতে থাকেন এবং কিছুটা বড় হওয়ার পর তার পিতামাতা তাকে একটি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন ।


থমাস আলভা এডিসন স্কুলে এডমিশন নেওয়ার কিছুদিন পর থেকে স্কুল থেকে তার সম্পর্কে নানা অভিযোগ আসতে থাকে। তিনি ছোট থেকেই শিক্ষকদের এতো প্রশ্ন করতেন যে শিক্ষকরা বিরক্তবোধ অনুভব করতো। আর তার সাথে শিক্ষকরা বলতো "এই ছেলেটি বুদ্ধিহীন,এর  দ্বারা পড়াশোনা হবে না,এরকম নানা  উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করে শিক্ষকদের।" এই ধরণের  মতামত ছিল স্কুল কর্তৃপক্ষের।


তবে একটি ব্যাপার বাচ্চা টমাস আলভা এডিসনের  প্রশ্ন এমন ছিল" যদি পাখি আকাশে উড়তে পারে তাহলে মানুষ কেন আকাশে উঠতে পারবেনা?"প্রতিটা  বিষয়ের পেছনে লুকিয়ে থাকা রহস্যকে  তিনি জানতে চাইতেন- কেন হচ্ছে ,কী করে হচ্ছে,কিভাবে হচ্ছে  এই সকল প্রশ্ন ছোটবেলা থেকেই তার মনে বাসা বাঁধে আর ছোটবেলা থেকেই তিনি যা  ভাবতেন সেটিকে পরীক্ষা করেও দেখতে চাইতেই।


 একটি ছোটগল্প আপনাদের বলছি থমাস আলভা এডিসনের ছোটবেলার। তিনি কোথাও শুনেছিলেন যেপাখিরা কীটপতঙ্গ খায় বলে পাখিরা আকাশে উড়তে পারে। তারপরের দিনই তিনি সকাল সকাল চলে যান একটি পার্কে ।সেখান থেকে তিনি নানা ধরণের কীটপতঙ্গ সংগ্রহ করেন এবং একটি জারের মধ্যে ভরে রাখেন।তারপর বাড়ি চলে আসেন এবং সেই জারে ভরা কীটপতঙ্গগুলোকে  নিয়ে একটি শরবত বানান ।তারপর তার এক বন্ধুকে সে শরবত  খাইয়ে দেন ।


ছোট থমাস এডিসন আশা করেছিলেন সেই বন্ধুটি এখন  আকাশে উড়বে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ সেই বন্ধুটি আকাশে উড়তে পারেনি কারণ তার  শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।এতগুলো কীটপতঙ্গের শরবত সে বন্ধুটি হজম করতে পারেনি ।তারপর যা হওয়ার ছিল তাই হয় ।থমাস এডিসন বাড়ি যাওয়ার পর তার বাবা মা তাকে অনেক পিটিয়েছিল।তবে মার খাওয়ার পরও তার গবেষণা করার চিন্তা,গবেষণার  প্রতি ভালোবাসা কোনো অংশেই কম হয়নি ।


এভাবেই চলতে থাকে। কিছুদিন পরে তিনি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেন এবং স্কুলের দেয়া একটি চিঠি  তিনি তার মায়ের হাতে দেন ।মা যখন সে চিঠিটি  খুলেন এবং  চিঠির ভিতরের লিখা যখন পড়েন তখন তার চোখে পানি চলে আসে।আর সেই চোখের পানি দেখে থমাস আলভা এডিসন তার মাকে প্রশ্ন করেছিল "মা,কি লিখা আছে চিঠিতে ?"


মা তখন চোখের পানি মুছে থমাস এডিসনকে বলেন যে ,"স্কুল এই চিঠিতে লিখেছে-আপনার ছেলে খুব বুদ্ধিমান,কোনো জিনিয়াসের  থেকে কোনো অংশে কম নয় আপনার ছেলে,কিন্তু আপনার ছেলের তুলনায় আমাদের স্কুলটি একটু লো লেভেলের ,আমাদের স্কুলের শিক্ষকরা এতো অভিজ্ঞ নয়।তাই আমরা আপনার ছেলেকে পড়াতে পারবো না।এবার থেকে আপনি আপনার ছেলেকে বাড়িতে পড়ান।


এডিসনের বয়স তখন নয় বছর আর সেখান থেকে শুরু হয় এডিসনের বাড়িতে পড়াশোনা করার পালা।ছোটবেলা থেকে বিজ্ঞানের প্রতি তার অদ্ভুত একটি টান ছিল।তার মা তাকে বিজ্ঞানের একটি বইও দিয়েছিলেন।রসায়ন বিজ্ঞানের কিছু পরীক্ষা কিভাবে বাড়িতেই করা যায় সেসব কিছু লিখা ছিল।


আর তারপর মাত্র ১০ বছর বয়সে থমাস আলভা এডিসন নিজের বাড়িতেই প্রথম তার ল্যাব বানিয়ে ফেলেন আর সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে শুরু করেন।কিছুদিন পর অবশ্য তার মায়ের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে তার মা সে ল্যাবটিকে  ভেঙে দেয় এবং তার জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেয়। তারপর কি ! অর্থের প্রয়োজন ছিল নতুন ল্যাব  বানানোর জন্য এবং এর সাথে শুরু হয় আলভা এডিসনের নাতুন এক পথে যাত্রা।


তিনি স্টেশনে এবং ট্রেনে নিউজপেপার ও জিনিসপত্র বিক্রি শুরু করে দেয়।আর  ট্রেনের সে ফাঁকা কামরাতে  তিনি তার রাসায়নিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেন।তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১২বছর। 


এভাবে চলতে থাকে। আলভা এডিসনের বয়স যখন ১৫ বছর তখন তিনি   নিজস্ব সমাচারপত্র প্রকাশ করেন আর সেই সমাচারপত্রের নাম ছিল "Grand Trunk Herald."এর মধ্যে বহু আপ-টু-ডেট  আর্টিকেল প্রকাশিত হতো এবং তৎকালীন সময় মানুষ এটিকে পছন্দও করছিলো।


এভাবে চলতে চলতে একদিন ট্রেনের একটি ফাঁকা কামরাতে থমাস আলভা এডিসন নিজের রাসায়নিক পরীক্ষা করছিলো আর সেই রাসায়নিক পরীক্ষার ফলস্বরূপ সে কামরার মধ্যে আগুন লেগে যায়।ট্রেনের সুরক্ষা কর্মীরা আসে এবং সে আগুন নেভায়।তারপর থমাস আলভা এডিসনকে খুব জোরে একটি চড়  মারেন।তারফলে থমাস আলভা এডিসনের যে কানে সমস্যাটি ছিল সে সমস্যা আরও বেড়ে যায়।


কিছুদিনের মধ্যে তার কানের একদিকে শোনা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।আর তাকে বারন করে দেয়া হয় যে তিনি যেন স্টেশনে না আসে আর ট্রেনের মধ্যে কোনো কিছু বিক্রি  না করতে পারেন।এভাবে সময় এগুতে থাকে আর তার ঠিক তিন বছর পর একটি বাচ্চার সাথে এক্সিডেন্ট হওয়ার আগে থমা আলভা এডিসন সেই বাচ্চাটাকে রক্ষা করেন।আর তার ফলস্বরূপ সেই বাচ্চাটির বাবা খুশি হয়ে আলভা এডিসনকে টেলিগ্রাফ শিখিয়ে দেন ।


তারপর থমাস আলভা এডিসন একটি টেলিগ্রাফ অপারেটরের কাজ পেয়ে যান ।টেলিগ্রাফ ছিল তৎকালীন সময়ে কমুনিকেশনের খুব জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। আর টেলিগ্রাফে কাজ করতে করতে টেলিগ্রাফ সম্পর্কিত নানান প্রশ্ন থমাস  আলভা এডিসনের মনে বাসা বাঁধে।তারপর টেলিগ্রাফের উপর তিনি নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা আরম্ভ করেন।তখন তার বয়স ২২ বছর।


তিনি বানিয়ে ফেলেন Stock ticker আর তিনি এটিকে বিক্রি করতে চান ।যখন তিনি অনুভব করেন এই এই আবিষ্কারের মূল্য হলো ৫০০০ ডলার তখন তিনি এর কমে ৩০০০ ডলারেও এটি বিক্রি করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলন। কিন্তু একটি টেলিগ্রাফ কোম্পানি তার কাছ থেকে এটি কিনে নেয় ৪০ হাজার ডলার দিয়ে। ৪০ হাজার ডলার অর্থাৎ বর্তমানে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার সমান। তার প্রথম আবিষ্কার বিক্রি হলো বর্তমান প্রায় ৫ কোটি টাকা সমানে।


 তিনি কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির জন্য কাজ করতেন না।তিনি তার আবিষ্কার গুলি করতেন এবং যাদের প্রয়োজন তারা এসে সেই জিনিসগুলো  কিনে নিয়ে যেত। তারপর আরেকটি  আবিষ্কার ছিল Quadruplex।এতে  একটি তার দিয়ে দুটি ডিরেক্শনে দুটি  আলাদা আলাদা সিগন্যাল পাঠানো যেতো। আর তার এই আবিষ্কারটি  বিক্রি হয় ১০০ হাজার ডলারে।


তার এই আবিষ্কারটি  কিনেছিলেন তৎকালীন বিখ্যাত রেল ব্যবসায়ী জে কল । তারপর ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফনোগ্রাফ বানায় ।এতে সাউন্ড রেকর্ড, গান শোনার মত প্রভৃতি কাজগুলি করা যেত। এটি তৎকালীন সময়ে খুবই জনপ্রিয় ছিল এবং এটি থমাস আলভা এডিসনেরও খুব প্রিয় ছিল। এছাড়াও মোশন পিকচার ক্যামেরা-এটিও তাঁর অবদান ছিল।এছাড়াও সিমেন্ট,ব্যাটারী এগুলোকে আপডেট করার ক্ষেত্রেও স্যার থমাস আলভা এডিসনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ।


তার আরেকটি জনপ্রিয় আবিষ্কার ছিল ইলেক্ট্রিক বাল্ব।এটি একটি জনপ্রিয় দান ছিল থমাস আলভা এডিসনের।তবে একটি কথা তিনি প্রথম ইলেকট্রিক বাল্ব বানায়নি। তিনি এমন একটি বাল্ব  বানিয়েছিলেন যার  খরচ ছিল অনেক কম এবং সাধারণ মানুষকে এটিকে ব্যবহার করতে পারত।তিনি বলেছিলেন"আমরা আলো তথা বিদ্যুৎকে  এতটাই সস্তা করে দেবো যে কেবল বড়লোকরাই  মোমবাতি জ্বালাবে ।" তার ভাবনা চিন্তাটাই এমন।তিনি  আবিষ্কারের জন্য ১০ হাজার বার ফেল হয়েছিলেন। কিন্তু তবুও তিনি আশা হারায় নি,তিনি করে দেখিয়েছিলেন।



২১শে অক্টোবর ১৮৭৯ প্রথমবার থমাস আলভা এডিসনের বাল্ব জ্বলে পৃথিবীতে এবং দূর দূর থেকে হাজার হাজার লোক এই জ্বলন্ত আলোকে দেখতে আসেন ।এই উন্নতির সাথে সাথে এডিসন নিজের নামে কোম্পানিও বানিয়েছিলেন।তার মধ্যে রয়েছে এডিসন ল্যাম্প কোম্পানি,এডিসন মেশিন ওয়ার্ক,ইলেকট্রিক লাইট কোম্পানি প্রমুখ।পরবর্তীতে অবশ্য তিনি এই সকল কোম্পানিকে একটি কোম্পানির আওতায় নিয়ে আসেন।


থমাস আলভা এডিসন ততদিনে বড় এক ব্যবসায়ী আর বড় বিজ্ঞানী,বিশ্ব তাকে চিনছিল এমনি এক সময় আলভা এডিসন নিজের পুরোনো জিনিসপত্রগুলো দেখছিলেন আর পুরোনো কথা ভাবছিলেন।আর সেই সময়  আলমারির এক কোনে একটি চিঠি পান,এটি হলো সেই চিঠি যেটি ছোটবেলায় সে স্কুল থেকে দিয়েছিল যেটিকে পরে থমাস আলভা এডিসনেই মায়ের চোখে পানি এসে গেছিলো।যেটিতে লিখা ছিল "আপনার ছেলে খুব বুদ্ধিমান।"


তিনি খুব উৎসাহের সাথে সেই চিঠিটি খুলেন এবং পড়েন।কিন্তু এই চিঠিটি পড়ে থমাস আলভা এডিসনের চোখেও পানি চলে আসে।চিঠিটিতে লিখাছিল"আপনার বাচ্চা মেন্টালি উইক,আপনি আর এই বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাবেন না।তারপর এডিসন চোখের পানি নিয়ে তার একটি ডায়রিতে লিখেন"এক মহান মা তার মেন্টালি উইক বাচ্চাকে বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী বানিয়েছেন।"


এই গল্প থেকে আমরা একটি জিনিস বুঝতে পারি যে সবকিছুই করা সম্ভব।যে বাচ্চাকে স্কুল মেন্টালি উইক বলেছে তার মায়ের ভালোবাসা ,চেষ্টা আর  সেই বাচ্চার ইচ্ছার জন্যই আজ সে এতো বোরো বিজ্ঞানী হতে পেরেছে ।শিক্ষা গ্রহণের  নির্দিষ্ট কোন স্থান হয় না।মানুষ যেখানে খুশি,যে কোনো জায়গা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে এবং সে বিশ্বের সেরা হয়ে দেখাতে পারে।







Post a Comment

0 Comments